চকলেট কালারের গর্জিয়াস ফ্রেম। ফ্রেমের মাঝে সোনালী রঙয়ের প্রলেপ। তাতে বিভিন্ন রঙিন অক্ষরে লেখা। প্রথম দেখায় মনে হবে কোনো বিশাল অনুষ্ঠানে ভিআইপি মানের অতিথির জন্য বিশেষ এই ক্রেস্ট বানানো হয়েছে।
কিন্তু ভুল। ক্রেস্ট নয়, এটি একটি বিয়ের কার্ড। জনতা ব্যাংক কর্মচারী ইউনিয়নের সিবিএর সভাপতি রফিকুল ইসলামের মেয়ের বিয়ের কার্ড বানানো হয়েছে এভাবেই। আগামী ২২ জুলাই রফিকুল ইসলামের কনিষ্ট কন্যা রোশনী ইসলামের বিয়ের দিন ধার্য করা হয়েছে।
তবে শুভদিনের এই আমন্ত্রণপত্র দেখলে যে কেউই চমকে উঠবেন। একটি আমন্ত্রণপত্রের রূপ যদি এমন হয়! তাহলে বিয়ের সার্বিক খরচ কী হতে পারে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। কত সম্পদ গড়েছেন সিবিএর সভাপতি রফিকুল ইসলামর, সে প্রশ্ন এখন জনমনে। অনেকেই বিয়ের কার্ডটির ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে সমালোচনা করছেন।
ছাত্র ইউনিয়েনের সাবেক সভাপতি বাকী বিল্লাহ তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘ছবির ক্রেস্টটি কোনও ব্যক্তি বিশেষের সম্মাননার জন্য নয়, এটি একটি বিয়ের কার্ড। জনতা ব্যাংক কর্মচারী ইউনিয়নের সিবিএর সভাপতি রফিকুল ইসলামের মেয়ের বিয়ের কার্ড। বিয়ে হবে আগামী ২২ জুলাই, ২০১৮।
এই বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি একটি দৈনিকে ‘একক ব্যক্তির ঋণে বৃহত্তম কেলেঙ্কারি’ শিরোনামের একটি হইচই ফেলে দেয়া রিপোর্ট সবার মনে থাকার কথা। জনতা ব্যাংক সকল নিয়ম কানুনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এননটেক্স গ্রুপের ইউনুস বাদলকে ৫০০০ কোটি টাকা ঋণ দেয়। জনতা ব্যাংকের মোট মূলধন ২ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা। মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দেয়ার সুযোগ আছে। অর্থাৎ এক গ্রাহক ৭৫০ কোটি টাকার বেশি ঋণ পেতে পারেন না। দেয়া হয়েছে মোট মূলধনের প্রায় দ্বিগুণ।
ওই রিপোর্টে জানা যায়, ইউনুস বাদলকে ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পর্ক করে দিতে ভূমিকা রেখেছিলেন সিবিএ সভাপতি রফিকুল ইসলাম। তার নগদ প্রমাণ পাওয়া যায় প্রতিবেদকের কাছে রফিকুল ইসলামের স্বীকারোক্তিতে। নিজের নামে গ্রামে ২০১ গম্বুজের মসজিদ বানাচ্ছেন, যাতে মোট খরচ হবে ২৫০ কোটি টাকা। ইউনুস সাহেব মসজিদের জন্য শত কোটি টাকার উপরে দিচ্ছেন (রফিকুল নিজে দিচ্ছেন এই তথ্য)।
আশ্চর্যের বিষয় হলো- এই বিয়ের কার্ডে রফিকুলের পরিচয়ের মধ্যে উল্লেখ করা হচ্ছে যে তিনি ২০১ গম্বুজ মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা। অর্থাৎ দুর্নীতি ও লুটপাটের চিহ্ন গোপন করা দূরে থাক; তিনি ফলাও করে সেটাকে প্রচার করছেন। যে অপরাধে অনিবার্যভাবে তার জেলের ঘানি টানার কথা, তাকে বরং গৌরবচিহ্ন হিসেবে সমাজে উপস্থাপন করছেন। এটা ঘটতে একটা রাষ্ট্রকে কতটা লুটেরা ও দেউলিয়া হতে হয় তা ভাবলে বিস্ময় বোধ করি।
আরও পরিতাপের বিষয় হলো- এই একটি বিয়ের কার্ডে রফিকুল ইসলামের পরিচয় হিসেবে মোট তিনবার ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। এটা যে মুক্তিযুদ্ধের জন্য কত বড় অপমান- তা আজকাল লোকেদের ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিতে হচ্ছে।